শিশুরা খেলতে ভালোবাসে। বিভিন্ন রকম খেলনাই তাদের খেলাধুলার উপকরণ। কিন্তু আজকাল শিশুদের খেলার অন্যতম উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মা-বাবার স্মার্টফোন। সুযোগ পেলেই মুঠোফোনে গেম খেলতে শুরু করে শিশুরা। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই শিশুরা বেশি ঝুঁকেছে মোবাইল গেম নামের এই স্মার্ট খেলাধুলায়। অভিভাবকেরাও অনেকটা বাধ্য হচ্ছেন ঘরবন্দী শিশুদের বিনোদনের খোরাক জোগাতে মুঠোফোন তাদের হাতে তুলে দিতে। যারা স্কুলে পড়ে, সেই শিশুদের অনলাইন ক্লাসের জন্য তো মুঠোফোন ব্যবহার করতে দিতেই হয়। কিন্তু যে গেম শিশুরা খেলছে বা নামিয়ে নিচ্ছে (ডাউনলোড), সেটি আসলেই শিশুর বয়সের উপযোগী তো? বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন কিছু শিশুমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না তো?
ডিজিটাল সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. সাইমুম রেজা তালুকদার বললেন, 'ইন্টারনেট নিরাপদে ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা থাকা খুব জরুরি। সেটা ওয়েবসাইট দেখা (ব্রাউজিং) থেকে শুরু করে গেম—সব ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বড়রাই অনেকে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন নন, সেখানে শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি তো আরও নাজুক। আসলে শিশু তাঁর বয়স উপযোগী গেম নামাচ্ছে কি না, সেটি দেখার দায়িত্ব মূলত বাবা-মায়ের।'
মুঠোফোনে গেম খেলার ক্ষেত্রে প্রতিটি স্মার্টফোনে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অপশন থাকে। অভিভাবকদেরই জানতে হবে কীভাবে সেটা চালু করা যায়। কিন্তু যদি ব্রাউজার চালু করা থাকে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাউনলোড না করে খেলা যায় সে ক্ষেত্রে? শিশু কী ধরনের গেম খেলছে, সেটি আটকে রাখার বা নিষেধাজ্ঞা তৈরি করার তেমন কোনো উপায় নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, কার্টুন, অ্যানিমেশন ও অন্যান্য মাধ্যমে শিশুদের ও অভিভাবককে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো যেতে পারে। তাহলে সব বয়সীরা জানতে পারবেন কোন বয়সের জন্য কেমন গেম।
বাংলাদেশে গেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উল্কা গেমস লিমিটেডের ব্যবসায় পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, 'প্রতিটি গেম তৈরির সময় সেটি কোন বয়সীদের জন্য উপযুক্ত, সেটি উল্লেখ করা থাকে। বাবা-মায়েরা কিছুটা সচেতন হলেই বয়স অনুযায়ী গেম নির্ধারণ করে দিতে পারেন। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে যখন কেউ অ্যাকাউন্ট খোলেন, শুরুতেই স্বয়ংক্রিয় বার্তা আসে কী কাজের জন্য আপনি প্লে স্টোরকে ব্যবহার করতে চান সেটি জানতে চেয়ে। তখন যদি অভিভাবকেরা জানান, শিশুর জন্য অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে তবে গুগল থেকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের আওতায় চলমান বা প্রধান অ্যাকাউন্টের অধীনে একটি সাব-অ্যাকাউন্ট খুলে নেওয়া যায়। এর ফলে অভিভাবক ইচ্ছেমতো যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কোন অ্যাপ কত সময় চলবে, শিশুরা কোন মাধ্যম ব্যবহার করছে চাইলে তার সবই তখন দেখা যাবে মোবাইলের স্টোরেজ থেকে।
সচেতন মা–বাবা ইচ্ছে করলেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন শিশুর গেম খেলার বিষয়টিতে। সে ক্ষেত্রে স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ নয়তো ডেস্কটপের সেটিংসে গিয়ে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল নির্বাচন করতে হবে। সেখানে কীভাবে কন্ট্রোল করবেন, তা জানতে চাওয়া হয়। কয়েকটি অপশনের মধ্য থেকে নিজের পছন্দের অপশনটি নির্বাচন করতে হয়। চাইলে পুরো ফোনকে সংখ্যা, প্যাটার্ন লক, আঙুলের ছাপ বা নিজের ছবি দিয়ে লক করে রাখতে পারেন। এতে যখন-তখন শিশুরা মুঠোফোন চালাতে পারবে না।